রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
যার জন্য দোয়া করেন ফেরেশতারাও

যার জন্য দোয়া করেন ফেরেশতারাও

প্রতিনিয়ত আমরা বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হই আর বিভিন্ন কারণে মানুষ অসুস্থ হতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক। সুস্থতা সৃষ্টিকর্তার এক বিশেষ নেয়ামত। এই নেয়ামতের শুকরিয়া সব সময় আদায় করা উচিত।

আমাদের আত্মীয়স্বজন এবং পাড়াপ্রতিবেশী অসুস্থ হলে তাদের জন্য আমাদের কিছু করণীয় রয়েছে। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া, তার সেবা শুশ্রষা করা এবং তার জন্য উপযুক্ত খাদ্য সামগ্রী নিয়ে যাওয়া ও তার খোঁজ খবর নেয়া ইসলামি শিক্ষার অন্তভুর্ক্ত।

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া অনেক পুণ্যের কাজ। হাদিসে এসেছে হজরত আলী (রা.) বলেন, আমি মহানবী (সা.)কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি সকালে কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফেরেশতারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য নেক দোয়া করতে থাকে। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, পরদিন সকাল পর্যন্ত নেক দোয়া করতে থাকেন। আর তাকে জান্নাতের একটি বাগান দান করা হয়।’ (তিরমিজি শরিফ)

রোগীর সেবাযত্ন করাকে আল্লাহ ও তার রাসুল অনেক পছন্দ করতেন। এমনকি অসুস্থ ব্যক্তির সেবাযত্নকে স্বয়ং আল্লাহতায়ালার সেবাযত্নের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সুবহান আল্লাহ।

হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহতাআলা কেয়ামতের দিন মানুষকে ডেকে বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তখন তুমি আমাকে দেখতে (সেবাযত্ন করতে) আসনি। মানুষ বলবে, হে প্রভু! আপনি রাব্বুল আলামিন, আমি কিভাবে আপনার সেবা করব?

আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে পারনি যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল; কিন্তু তখন তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে (অসুস্থ ব্যক্তিকে) দেখতে যেতে (সেবাযত্ন করতে) তাহলে সেখানে আমার দেখা পেতে? (মুসলিম ও মিশকাত)

রোগীর সেবাযত্ন করার মাধ্যমে আমরা সহজেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি। আমরা যখন কোন রোগীকে দেখতে যাব তখন তার পুণ্যকর্মগুলো স্মরণ করে কথা বলতে পারি। কেননা হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তুমি কোনো রোগীর কাছে যাবে কিংবা মরণোন্মুখ ব্যক্তির কাছে যাবে, তখন তার সঙ্গে মঙ্গলজনক কথাবার্তা বলো। কেননা তুমি যা বলো ফেরেশতাগণ তার ওপর আমিন আমিন বলে।’ (মুসলিম ও মিশকাত)

রোগী দেখতে যাওয়া ও তার সেবার করায় অনেক পুণ্য নিহিত এমনকি আকাশ থেকে ফেরেশতাও তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। যেভাবে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায়, তখন আকাশ থেকে এক ফিরিশতা তাকে লক্ষ্য করে বলতে থাকে, মোবারক হও তুমি এবং মোবারক হোক তোমার এই পথ চলা এবং তুমি জান্নাতে একটি স্থান করে নিলে।’ (ইবনে মাজাহ)

রোগীর সুস্থতার জন্য আমাদেরকে দোয়া করতে হবে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) একজন বেদুঈনকে দেখতে গেলেন। আর তার নিয়ম এই ছিল যে, যখন তিনি কোনো রোগীকে দেখতে যেতেন তখন বলতেন, ‘লা বা’সা তুহুরুন ইনশাআল্লাহ।’ অর্থ : ‘ভয় নেই, আল্লাহর মেহেরবানীতে আরোগ্য লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ।’ (বোখারি, মুসলিম, মিশকাত)

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ যখন অসুস্থ হতো তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তার ডান হাত রোগীর শরীরে বুলাতেন এবং বলতেন, ‘আজহাবিল বা’সা রব্বান নাসি, ওয়াশফি আনতাশ শাফি, লা শিফাআ’ ইল্লা শিফা উকা শিফাআ’ লা ইউগাদিরু সুক্বমা। অর্থ : ‘হে মানুষের প্রতিপালক! এ রোগ দূর কর এবং আরোগ্য দান কর, তুমিই আরোগ্য দানকারী। তোমার আরোগ্য ব্যতিত কোনো আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য, যা বাকী রাখে না কোনো রোগ।’ (বোখারি, মিশকাত)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন অসুস্থদের কষ্ট দূর করে আরোগ্য দান করেন আর আমাদেরকে তার নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে রাখেন এবং সব বালামুসিবত থেকে মুক্ত রাখেন, আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877